সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রবাসী রমনীদের মনোভূমে দুর্গোৎসবের সিঁদুর খেলা

প্রবাসী রমনীদের মনোভূমে দুর্গোৎসবের সিঁদুর খেলা

স্বদেশ রিপোর্ট: সনাতন হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কয়েক দিনব্যাপী এই পূজায় পালিত হয় নানা রকমের অনুষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হলো “সিঁদুর খেলা”। এই সিঁদুর খেলার দেখা মেলে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিনে।এই দিনে কেবল দুর্গা মাকে বিদায়ই জানানো হয় না, এর সঙ্গে থাকে নানা আয়োজনও । সিঁদুর খেলা এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ।ঐদিন সকালে পূজার পর থেকে শুরু করে দেবীকে বিদায়ের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে এই সিঁদুর খেলা। সিঁদুর খেলা হিন্দুদের রঙ খেলা থেকে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।

শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন অর্থাৎ দশমীর দিনে সর্বশেষ যে রীতিটি পালিত হয়, এর নাম “দেবী বরণ”। বিবাহিত নারীরা সিঁদুর সহ অন্যান্য উপাচার সহকারে এই ‘দেবী বরন’ করে থাকেন। দুর্গা মাকে বিসর্জনের জন্য বিদায় দেওয়ার আগে তাঁর সিঁথিতে সিঁদুর মাখানোর পর অবশিষ্ট সিঁদুর দিয়ে তাঁরা একে অপরকে রাঙিয়ে দেন। মূলত এটিকে দেখা হয় সোহাগের কিংবা বিবাহিত নারীদের সৌভাগ্য কামনাস্বরূপ হিসেবে। এটি মূলত খেলেন বিবাহিত নারীরা। তাঁরা একে অন্যকে লাল রঙের সিঁদুরে রাঙিয়ে দেন। মাথার এক প্রান্ত থেকে শুরু করে পুরো সিঁথি জুড়ে থাকে এই সিঁদুর। এই লাল রংকে ধরা হয় শক্তির প্রতিরূপ হিসেবে।

এই সিঁদুর খেলার অন্যতম গুরুত্ব হলো, বিবাহিত নারীরা তাঁদের সিঁদুরের স্থায়িত্ব অর্থাৎ তাঁদের স্বামীর দীর্ঘ জীবন কামনার উদ্দেশ্যেই তাঁরা এই সিঁদুর খেলা খেলে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে তাঁরা একে অন্যের সিঁথি,হাতের শাঁখা ও মুখাবয়ব সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেন ।বিবাহিত নারীরা একে অন্যের সৌভাগ্য কামনা করে এই সিঁদুর পরিয়ে থাকে।এই সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিজয়ার ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কিছুটা আনন্দের সঞ্চার হয় । বিবাহিত নারীরা ব্যতীত এটি অবিবাহিত মেয়েরাও খেলে থাকেন। অবিবাহিত নারীদের বিবাহিত নারীরা এ জন্যই সিঁদুর পরিয়ে দেন, যাতে দুর্গা মায়ের আশীর্বাদে তাদের ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবন সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে । এই দিনে প্রায় সব নারীই লাল রংয়ের শাড়ি পরে থাকেন। শারদীয় দুর্গাপূজার এই সিঁদুর খেলা নিয়ে কথা বলেছিলাম প্রবাসের কয়েকজন হিন্দু রমনীর সঙ্গে।

শুক্লা পাল- নিউজারসি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে বসবাসরত শুক্লা পাল সিঁদুর খেলা প্রসংগে বলেন,স্বামীর দীর্ঘায়ু, সুস্থতা ও সৌভাগ্য কামনায় দুর্গা মায়ের চরণে দেওয়া সিঁদুর মাথায় পরি।দুর্গা পূজার তিনদিনের আনন্দ উল্লাস শেষে দশমীর দিন মায়ের বিদায়ে মনটা যখন ব্যথায় গুমরে মরে,তখন সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সেই ব্যথা কিছুটা প্রশমিত হয়।সিঁদুর খেলার সময় এক ধরনের ভালো লাগার বোধে মন প্রাণ আচ্ছন্ন থাকে।সিঁদুর খেলার সুখানুভূতিটা আসলে ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।

নিবেদিতা ভট্টাচার্য – নিউজারসির নর্থফিলড এর বাসিন্দা কোরিওগ্রাফার নিবেদিতা ভট্টাচার্য সিঁদুর খেলা প্রসংগে বলেন,বিজয়া দশমীর দিন মাকে বিদায় জানানোর প্রাক্কালে মায়ের চরনের সিঁদুর তিনি মাথায় পরেন মায়ের আশীর্বাদ হিসাবে,দীর্ঘকাল ধরে যাতে তিনি স্বামী ভাগ্যে সৌভাগ্যবতী থাকতে পারেন সেই আশায় সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন এবং অন্য নারীরও সেই সৌভাগ্য কামনা করে তাদেরকে সিঁদুরে রাঙান।তিনি আরো বলেন,সিঁদুর খেলার সময় তিনি অনাবিল আনন্দে মেতে ওঠেন।কারন দুর্গা মায়ের বিদায়ে তাঁর ব্যথাতুর মনে বিদায়ের যে রাগিনী বাজে,সিঁদুর খেলার মাধ্যমে তা কিছুটা প্রশমিত হয়।

সুনীল বিউটি দাশ- নিউজারসি অংগরাজ্যের নর্থফিলডে বসবাসরত সংস্কৃতিপ্রেমী সুনীল বিউটি দাশ জানান,সিঁদুর খেলার মাধ্যমে মায়ের আশীর্বাদ তিনি মাথায় পরেন,যাতে করে তিনি দীর্ঘকাল ধরে স্বামীর সোহাগে সোহাগীনি থাকতে পারেন।সারা বছরের প্রতীক্ষা শেষে মায়ের আগমনে তাঁর মন প্রাণ আনন্দে নেচে ওঠে,তিনদিন ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।কিন্ত বিজয়া দশমীর বিদায়ের সুর তাতে ছেদ টানে।তাঁর মন দু:খ ভারাক্রান্ত হয়,বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।সেই বেদনা লাঘবের উদ্দেশ্যেই তিনি সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন।

শুক্লা দাশ – এগ হারবার সিটিতে বসবাসকারী সংস্কৃতিসেবী শুক্লা দাশ সিঁদুর খেলা প্রসংগে বলেন,সিঁদুরের লাল রং পবিএতার প্রতীক।সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সেই পবিএতা নিজের মাথায় ধারন করেন এবং অন্যকেও সিঁদুর দিয়ে রাঙানোর মাধ্যমে সেই পবিএতা তার মাঝে বিলিয়ে দেন।বিজয়ার দিন দুর্গা মায়ের বিদায়ে এমনিতেই তাঁর মনটা বিষাদগ্রস্ত থাকে,সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সেই বিষাদ দূর হয়ে মনের মধ্যে ভিন্ন রকমের সুখানুভূতি অনুভূত হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877